আগের দিনে, আমাদের একটু কাঁসি হলেই মা, দাদীরা তুলসী পাতার রস খাওয়াতো, বাসক পাতার রস খাওয়াতো । চুলকানিতে নিম পাতার রস খাওয়াতো ও  বেটে শরীরে লাগিয়ে দিতো । এই ট্রেডিশন এখন আর নাই ।  এসবের স্থান এখন আধুনিক চিকিৎসা দখল করে নিয়েছে ।  মানুষের সামান্য সর্দি হাঁচি হলেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে চলে যাচ্ছে , সামান্য কারনে এন্টিবায়োটিকের অপব্যবহার হচ্ছে, প্রচুর ওষুধ খাওয়ার কারনে যে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হচ্ছে তা  তারা নগদে টের পাচ্ছেনা ।

তবে বর্তমানে মানুষ সচেতন হচ্ছে, ক্যামিকেল যুক্ত ওষুধের সাইড ইফেক্ট সম্পর্কে জানছে। তারা এখন আবার ন্যাচারাল চিকিৎসা গ্রহন করতে চাচ্ছে ।

হাজার বছরের পুরাতন  ভেষজ চিকিৎসার প্রতি মানুষের আগ্রহ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে মূলত  ক্ষতিকর ঔষধ থেকে দূরে থেকে প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে প্রাকৃতিক চিকিৎসা গ্রহনের  ইচ্ছা থেকে ।

এই আগ্রহের জন্যই দেশের নামকরা ও বড় বড় এলোপ্যাথিক ওষুধ কোম্পানিগুলো এখন ন্যাচারাল মেডিসিন তৈরী করছে, যেমনঃ স্কয়ার, একমি, ইবনেসিনা, রেডিয়েন্ট ইত্যাদি  ।

অনেকে এখন  ওষুধ কোম্পনির তৈরি করা  ভেষজ বা ন্যাচারাল ওষুধও  খেতে চাচ্ছে না ।  কারন হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পনি ছাড়া বাকি ওষুধ কোম্পনি গুলা আসলে আমাদের ভেষজ ওষুধের নামে গুণহীন ক্যামিকেল খাওয়াচ্ছে ।  এ বিষয়ে  আমরা প্রায়ই পেপার পত্রিকা ও টিভিতে দেখি ।

অনেকে চাচ্ছে, রশুনের তৈরি ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল না খেয়ে সরাসরি রসুন খেতে । যেখানে মানুষের কোনো হাত নেই সরাসরি স্রষ্টার দেওয়া হার্বস খাওয়া ।  যখন এই হার্বস দিয়ে ওষুধ তৈরি করা হয় তার মধ্যেও প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা হয় দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য,  এই ক্যামিকেল প্রিজারভেটিভ নিয়েও অনেকের আপত্মি । তাই তারা চায়, একদম হার্বস  সরাসরি খেতে যাতে সামান্য প্রিজার্ভেটিভও থাকবে না।

আমার চেম্বারে অনেক রোগী এসে বলে ডাক্তারভাই, আপনি ভিজিট নেন বাট কোন কোম্পনির ওষুধ লিখে দিয়েন না । আমায় সরাসরি হার্বসের নাম ও খাওয়ার নিয়ম বলে দিন । আমি তখন তাই করি, প্রেসক্রিপশনে লিখে দেই, অমুক গাছের ছালের চূর্ন ১ চা চামুচ করে দুইবার ।  একটু চিন্তাকরে দেখুন মানুষ কত সতর্ক এখন! তাঁদের কথা হলো  -“ সময় বেশি লাগুক বাট আমার যেনো সামান্য ক্ষতিও না হয় “।

আমরা বাধ্য হয়ে কোম্পানির ওষুধ লিখে দেই কারন ঔষধি গাছপালা দিয়ে পাউডার / চুর্ন  তৈরি করা খুব সময়সাপেক্ষ  ও কষ্টকর। আবার অনেক সময় যৌগিক ওষুধও প্যাসেন্টকে দিতে হয় । তবে সাধারন রোগে সিঙ্গেল ভেষজ সবচেয়ে ভালো । আবার কিছু কিছু হার্বস আমাদের দেহকে / নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সুস্থ্য / ভালো রাখতে সহায়তা করে, প্রাইমারি চিকিৎসা হিসেবে নিজে নিজেও অনেক হাবর্স নিয়মিত সেবন করা যায় ।

একটা উদাহরন দিলে বুঝতে সহজ হবে, আমরা জানি  অর্জুনের ছালে হৃদরোগ নিরাময় হয়, নিয়মিত করল্লা ডায়েবিটিস রোগীদের জন্য ভালো । এলাচ গুড়া হজম বৃদ্ধি করে, ওলকচুতে রক্তশূন্যতা দূর হয়, গাজর রাতকানা রোগ থেকে রক্ষা করে, ঘৃতকুমারীর (এলোভেরা) শরবত ক্যান্সার ও বাতব্যাথার জন্য খুব ভালো, চিনা বাদাম ও থানকুনিপাতা স্মৃতিশক্তি বাড়ায়, টমোটোতে ক্যান্সার ও হৃদরোগ প্রতিরোধি উপাদান আছে, বেলের শরবত আমাশয় ও IBS সারায়, অশ্বগন্ধা ও শতমূল যৌন দুর্বলতা দূর করে,  তেতুল বীজের চুর্ন/পাউডার  বীর্যকে গাঢ় করে ও শুক্র উৎপাদন বাড়ে, কালো জামের বীজ ও মেথির গুঁড়া ডায়েবেটিসের উপকার হয়, এমন অনেক ভেষজের গুণ আমরা জানি এবং চাইলেই নিজেরা খেতে পারি ।

কিন্তু সমস্যা হলো,  ভালোমানের ও টাটকা ওষধিগুণ সমৃদ্ধ এমন ভেষজ গাছ-পালা সংগ্রহ করা কঠিন  হয়ে যায় ।

অনেক দিন থেকে চিন্তা করতে ছিলাম আমার রোগীদের শুধু গাছপালা দিয়ে  চিকিৎসা করবো, মানে হচ্ছে কোনো কোম্পানির  ওষুধ লেখবো না, এরপর কয়েকজন  রোগীকে নির্দিষ্ট হার্বসের গুঁড়া সংগ্রহ করে নিতে বললাম । তারা গুঁড়া খুঁজে পাচ্ছিলোনা । তখন মাথায় আসলো নিজেই তৈরি করে দেবো । পরিমানে বেশি তৈরি করলে খরচ যেমন কম হবে তেমনি রোগী ছাড়া অন্যরাও আমার  থেকে সংগ্রহ করে নিতে পারবে ।  শুরু হলো কাজ, লোক নিয়োগ দিলাম, নিজে না থাকলে, অনেক কিছু হয় না। তাই, শাস্ত্রীয় নিয়ম অনুসারে হার্বস সংগ্রহ করা, তারপর তা শুকানো, প্রতিটি আলাদাভাবে পরিস্কার করা, তারপর তা গুঁড়া করা এভাবে প্রতিটি কাজেই  শত ব্যস্ততার মধ্যেও সময় দিতে হলো   ।

শাস্ত্রীয় নিয়ম  সম্পর্কে একটু ধারণা দেই,  অর্থাৎ কোন নিয়মে ও কোন সময়ে হার্বস সংগ্রহ করতে । যদি এই নিয়ম মেনে হার্বস সংগ্রহ করা না হয় তাহলে এই হার্বস থেকে পরিপূর্ন রেজাল্ট পাওয়া যায় না ।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান “ বাংলাদেশ বোর্ড অব ইউনানী এন্ড আয়ুর্বেদিক সিস্টেমস অব মেডিসিন”  প্রকাশিত  আয়ুর্বেদীয় দ্রব্যগুণসার বইয়ের ( ৩য় প্রকাশঃ জুন ২০১১)  ৩৭ ও ৩৮ পৃষ্ঠায় এ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ননা করা হয়েছে ।

ঔষধ সংগ্রহের কাল সম্পর্কে  বলা হয়েছে “ শাখা ও পত্র বর্ষা কাল ও বসন্তকালে সংগ্রহ করা বিধিসম্মত। শীতকালে পত্র পতিত হইবার পর মূল গ্রহণ করা দরকার। ত্বক, কন্দ ও আঠা  শরৎকালে ও হেমন্তে সার এবং যে ঋতুতে যাহার পুষ্প ফল হইয়া থাকে, সেই ঋতুতে তাহার পুষ্প ও ফল গ্রহন করা বিধেয় ।“

যে কোন জায়গার হার্বস বা ঔষধি গাছপালা রোগ আরোগ্যের জন্য ব্যবহার করা যায় না । এ বিষয়েও এই বইতে বর্ননা করা হয়েছে, যাকে আমরা শাস্ত্রীয় বিধি বা নিয়ন বলেছি । আমরা শতভাগ এই শাস্ত্রীয় নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করি ।

Shopping Cart
Scroll to Top